Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
বিজ্ঞানীরা প্রথম নতুন সার্স-কোভিড-টু করোনাভাইরাসের কথা শুনেছিলেন প্রায় এক বছর আগে চীনে এটি ধরা পড়ার পর।
কিন্তু যে ভাইরাসটি বিশ্ব মহামারির জন্য দায়ী, সেটি হয়তো আমাদের সঙ্গে ছিল আরও আগে থেকে। নতুন এক গবেষণায় সেরকম ইঙ্গিতই পাওয়া যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এই গবেষণা প্রকাশ করেছে ‘ক্লিনিক্যাল ইনফেকশাস ডিজিজ’ নামের একটি জার্নালে।
সরকারি হিসেবে করোনাভাইরাস মহামারি শুরু হয়েছিল গত বছরের ৩১শে ডিসেম্বর, যখন চীনের উহান নগরীর স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায় এমন এক ভাইরাসের ব্যাপারে সতর্কবার্তা জারি করে। ধারাবাহিকভাবে বহু মানুষ তখন এই রহস্যজনক সংক্রমণের শিকার হচ্ছিল।
কিন্তু এখন ১১ মাস পরে এসে গবেষকরা দেখছেন, যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি রাজ্যের ৩৯ জন মানুষের শরীরে করোনাভাইরাসের অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছিল চীনে এই ভাইরাসে কথা জানা যাওয়ারও দুই সপ্তাহ আগে।
যুক্তরাষ্ট্রে সার্স-কোভিড-টু ভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ এবছরের ২১শে জানুয়ারির আগে ধরা পড়েনি।
কিন্তু সিডিসির এই গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে গত বছরের ১৩ই ডিসেম্বর হতে এবছরের ১৭ই জানুয়ারি পর্যন্ত ব্লাড ব্যাংকে নিয়মিত রক্ত দিয়েছেন এমন ৭ হাজার ৩৮৯ জনের রক্তের মধ্যে ১০৬ জনের নমুনায় করোনাভাইরাসের অ্যান্টিবডি রয়েছে।
কোন ব্যক্তির রক্তে অ্যান্টিবডি থাকার মানে হচ্ছে তিনি একটি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং সেই ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা চেষ্টা করেছিল।
এই ১০৬টি নমুনার মধ্যে আবার এমন ৩৯ জনের রক্তের নমুনা আছে, যাদের রক্ত নেয়া হয়েছিল গত বছরের ১৩ হতে ১৬ই ডিসেম্বরের মধ্যে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া, ওরেগন এবং ওয়াশিংটন রাজ্যে এসব মানুষ রক্ত দেন। তাদের সবার রক্তের নমুনায় পাওয়া গেছে করোনাভাইরাসের অ্যান্টিবডি।
এই গবেষণায় আরও দেখা যাচ্ছে, কানেক্টিকাট, আইওয়া, ম্যাসাচুসেটস, মিশিগান, রোড আইল্যান্ড এবং উইসকন্সিন রাজ্য থেকে জানুয়ারির প্রথম দিকে সংগ্রহ করা ৬৭ জনের রক্তের নমুনাতেও আছে করোনাভাইরাসের অ্যান্টিবডি। এটা এসব রাজ্যে করোনাভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার আগের কথা।
যারা এরকম আগে-ভাগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের বেশিরভাগই পুরুষ এবং তাদের গড় বয়স ৫২।
গবেষণাটি যারা চালিয়েছেন, তাদের বিশ্বাস এর মধ্যে কিছু অ্যান্টিবডি হয়তো বিশ্বে অন্যধরণের যেসব করোনাভাইরাস আগে থেকে ছিল, তার মোকাবেলা করতে গিয়ে তৈরি হয়েছে। কিন্তু তারা একই সঙ্গে একথাও বলছেন, অ্যান্টিবডি পাওয়া মানুষের সংখ্যাটা যেহেতু বেশ বড়, তাই এদের কেউ কেউ সেসময় কোভিড-১৯ দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন বলে ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
তবে গবেষকরা এখনো মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রে মানুষের মধ্যে ব্যাপকভাবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ফেব্রুয়ারি মাসের শেষভাগের আগে শুরু হয়নি।
কিন্তু এই গবেষণায় যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তার ফলে এই মহামারির শুরু সম্পর্কে এতদিন আমরা যা জানতাম, তাতে কি পরিবর্তন আনবে?
কখন করোনাভাইরাস প্রথম এসেছে?
ঠিক কোন মুহূর্তে প্রথম সার্স-কোভিড-টু ভাইরাস এসেছে, সেই প্রশ্নের উত্তর হয়তো আমরা কোনদিনই জানতে পারবো না।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে উহানে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার কথা প্রকাশ পাওয়ার কয়েক সপ্তাহ বা এমনকি কয়েক মাস আগে থেকে এই ভাইরাসটি ছড়াচ্ছিল বলে কয়েকটি ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
তবে সিডিসির গবেষকরা বলছেন, তাদের গবেষণার একটি সীমাবদ্ধতা হচ্ছে, লোকজন তাদের নিজদেশেই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে নাকি তারা ভ্রমণের সময় এর শিকার হয়েছে সেটি তারা নির্ধারণ করতে পারছেন না।
এই গবেষণার রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেছিল রেডক্রস। তারা বলছে, যে রক্তদাতাদের রক্ত তারা সংগ্রহ করেছে, তাদের মধ্যে মাত্র তিন শতাংশ বলেছিল, রক্ত দেয়ার আগের মাসে তারা বিদেশে ভ্রমণে গিয়েছিল। আর যারা বিদেশে গিয়েছিল, তাদের মাত্র পাঁচ শতাংশ বলেছিল তারা এশিয়ায় ভ্রমণ করেছে।
অন্য কিছু জায়গায় একই ধরণের গবেষণায় দেখা গেছে, চীনে সরকারিভাবে এই ভাইরাস সম্পর্কে সতর্কতা জারির আগেই সেখানে ভাইরাসের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।
যেমন মে মাসে ফ্রান্সের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছিলেন, কিছু নমুনা পরীক্ষা করে দেখা যাচ্ছে ২৭শে ডিসেম্বর প্যারিসের কাছে সন্দেহজনক নিউমোনিয়ার চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল এমন এক ব্যক্তির আসলে করোনাভাইরাস হয়েছিল।
কয়েকটি দেশের গবেষকরা সেখানে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সরকারি ঘোষণার আগের মাসগুলোতে সংগ্রহ করা পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থার বর্জ্য পানির নমুনা পরীক্ষা করেছেন। সেখানে তারা করোনাভাইরাসের উপস্থিতির প্রমাণ পেয়েছেন।
জুন মাসে ইতালির বিজ্ঞানীরা বলেন, ১৮ই ডিসেম্বরেই মিলান এবং তুরিনে নর্দমার পানিতে করোনাভাইরাসের উপস্থিতির প্রমাণ দেখা যাচ্ছে। অথচ ইতালিতে প্রথম করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে এর অনেক পরে।
এদিকে স্পেনেও একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বার্সেলোনায় জানুয়ারির মধ্যভাগে যে বর্জ্য পানির নমুনা সংগ্রহ করা হয়, সেখানে করোনাভাইরাস আছে। অথচ বার্সেলোনায় করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছে আরও ৪০ দিন পর।
ব্রাজিলেও আসলে করোনাভাইরাস কখন পৌঁছেছিল সেটা নিয়ে প্রশ্ন আছে।
২৬শে ফেব্রুয়ারি সেখানে প্রথম সংক্রমণের ঘটনা পরীক্ষায় ধরা পড়ে। ইতালিতে বেড়াতে গিয়েছিলেন ৬১ বছর বয়স্ক এমন এক ব্যক্তি সংক্রমণের শিকার হয়েছিলেন। ইতালি ততদিনে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
কিন্তু ফেডারেল ইউনিভার্সিটি অব সান্তা ক্যাটারিনার (ইউএফএসসি) একদল গবেষক সেখানে ২৭শে নভেম্বরেই বর্জ্য পানিতে করোনাভাইরাসের উপস্থিতির প্রমাণ পেয়েছেন।
অসওয়াল্ড ক্রুজ ফাউন্ডেশনের আরেকটি গবেষণাতেও দেখা গেছে, ব্রাজিলে সরকারিভাবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঘোষণার এক মাস আগে অন্তত একটি সংক্রমণের কথা জানা যাচ্ছে। ১৯ হতে ২৫শে জানুয়ারির মধ্যে এই সংক্রমণ ঘটেছে।
তবে এই সংক্রমণের সঙ্গে বিদেশ ভ্রমণের সম্পর্ক ছিল কিনা, সেটি জানা যায়নি।
তবে যেটা এখনো পরিষ্কার নয় কখন কীভাবে এবং কখন সার্স-কোভিড-টু ভাইরাস লোকজনকে সংক্রমিত করতে শুরু করে। আর এই ভাইরাস প্রাণী থেকে মানুষের শরীরে কখন ঢুকেছিল, সেটাও পরিষ্কার নয়।
এ পর্যন্ত সবার মনোযোগ কেবল চীনের উহান নগরীর একটি বাজারের দিকেই নিবদ্ধ ছিল, যেখানে মৃত এবং জীবিত বন্য প্রাণী বিক্রি করা হতো। শুরুর দিকের অনেক করোনাভাইরাসের সংক্রমণের সঙ্গে এই বাজারের সম্পর্ক ছিল বলে দেখা গেছে।
কিন্তু গবেষকরা নিশ্চিত নন, ভাইরাসটি সেখান থেকেই এসেছে নাকি সেখানে উপযুক্ত পরিবেশ পেয়ে ভাইরাসটি ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করেছে এবং একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে সংক্রমিত হয়েছে।
ইউনিভার্সিটি অব হংকং এর মাইক্রোবায়োলজিস্ট ইউয়েন কোক ইয়াং বলেন, “যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, কোনটির সম্ভাবনা বেশি, আমি বলবো ভাইরাস সেখান থেকেই আসে যেখানে বন্য প্রাণী বিক্রি করা হয়।”
চীন করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার যে সময়টির কথা প্রথমে বলেছিল, সেটি পরে তারা আরও পিছিয়ে দিয়েছে। এটি অস্বাভাবিক কিছু নয়। কোভিড-১৯ এর মতো দ্রুত ছড়াতে থাকা একটি ভাইরাসের বিষয়ে তদন্তে এরকম হতেই পারে।
উহানের ডাক্তারদের পরিচালিত এর আগের এক গবেষণা এ বছরের শুরুর দিকে প্রকাশ করা হয় মেডিক্যাল জার্নাল ল্যান্সেটে। এতে বলা হয়েছিল, প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয় ডিসেম্বরের ১ তারিখে, এবং তার সঙ্গে কোন বাজারের কোন সম্পর্ক ছিল বলে মনে হচ্ছিল না।
কিছু বিশেষজ্ঞ যুক্তি দিচ্ছেন যে, একটি ভাইরাস, যা থেকে একটি বিশ্ব মহামারি শুরু হতে পারে, সেটি কয়েক মাস ধরে শনাক্ত না হয়ে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়া কঠিন।
তবে এটি কয়েক সপ্তাহ ধরে সবার অগোচরে বিস্তার লাভ করছিল- এমনটাই তাদের কাছে অধিকতর বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়। বিশেষ করে, বিশ্বের উত্তর গোলার্ধে শীতের সময়।
সর্বশেষ
সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
সর্বাধিক পঠিত
আরও খবর
আরও
ইউনিভার্স ট্রিবিউন
- আল-রাজী কমপ্লেক্স (জি-৪০১-৩ ), ১৬৬-১৬৭, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্মরণি, বিজয়নগর, ঢাকা-১০০০, বাংলাদেশ
- ফোন : +৮৮ ০২ ৫৫১১১৫০১-২
- ফ্যাক্স : +৮৮ ০২ ৫৫১১১৫০৩
- ই-মেল : info.universetribune@gmail.com
- কপিরাইট
- ২০১৯-২০২০ ইউনিভার্স মিডিয়া লিমিটেড
- সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত