ছবি: প্রতীকী

করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর ঋণের পরিমাণ হয়ে পড়েছে আকাশচুম্বী এবং এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ক্রমাগতই সতর্কঘণ্টা বাজিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু প্রখ্যাত বৈশ্বিক অর্থনীতি বিশ্লেষক নিক ডিয়ারডেন বলছেন, ঋণ স্বস্তি ও ভোগান্তি লাঘবে খুব কমই ভূমিকা রাখবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পৃথিবীর ঋণ বিতরণ পদ্ধতিকেই বদলানো প্রয়োজন। ‘সবচে’ খারাপ এ সময়ে ঋণদাতারা যতক্ষণ পর্যন্ত চুক্তি মোতাবেক ‘যৌক্তিক দাবি’ অব্যাহত রাখবে ততক্ষণ পর্যন্ত বাধ্যতামূলকভাবেই দরিদ্রতম ও একেবারে সর্বস্বান্ত দেশগুলোকে তাদের সরকারের নেওয়া ঋণের কিস্তি পরিশোধ করে যেতে হবে। বর্তমান যুগে এটি ‘দেনাদারদের বন্দিশালার সমতুল্য’—এই কথাগুলো কোনো ঋণ প্রচারকের নয়, অতিসম্প্রতি উচ্চারিত হয়েছে স্বয়ং বিশ্ব ব্যাংকের সভাপতি ডেভিড ম্যালপাসের মুখ থেকে। আর তারও আগে আইএমএফ প্রধান আহ্বান জানান আন্তর্জাতিক ঋণ স্থাপত্য সংস্কারের। উভয়ের বাণীই বড় কিছু ঘটার ইঙ্গিত দিচ্ছে। সংগত কারণেই মনে প্রশ্ন জাগে, এর পেছনে আসলে কী ভূমিকা রাখছে?

করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে ঐতিহাসিকভাবে অভূতপূর্ব বৈশ্বিক ঋণের স্তর অনেক দেশকে ঠেলে নিয়ে গেছে একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়ার মতো অর্থনৈতিক সমস্যার মুখে। সন্দেহ নেই যে, স্বাস্থ্যের ওপর এর প্রভাব মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। কিন্তু প্রাদুর্ভাবের বর্তমান স্তর ডেকে আনছে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দাকে। 

স্বচ্ছ নীল আকাশের কোনো সম্ভাবনা আপাতত দেখা যাচ্ছে না। উপরন্তু বৈশ্বিক নেতারা ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক পতন থেকে কোনো শিক্ষাই নিচ্ছেন না। অর্থনৈতিক মডেল সংস্কারের পরিবর্তে (যেটি আমাদেরকে আজকের এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মুখোমুখি করেছে) আর্থিক পদ্ধতির সমাধান মিলেছিল আর সেজন্যে কৃচ্ছতার মাধ্যমে মূল্য দিতে হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সাধারণ জনগণকে, যদিও ব্যাংক ও হেজ ফান্ডগুলো তখন উচ্চ-ঝুঁকিসম্পন্ন ধারের উত্সবে যোগ দিতে চলে যায় বিশ্বের দক্ষিণের দেশগুলোয়। ফলশ্রুতিতে অনেক দেশ ঋণ সমস্যায় ভুগতে শুরু করে মহামারি শুরুর আগেই। তারপর আবার নেমে আসল করোনা নামক বিরাট বিপর্যয়। তখন দেখা দিল বাণিজ্যে ধস, পণ্যের আকাশছোঁয়া মূল্য এবং মুদ্রার মানে বিরাট পতন। 

যদিও এ বছর শক্তিশালী জি টুয়েন্টি দেশগুলো ৭০টিরও বেশি দরিদ্র দেশকে ঋণ পরিশোধে ক্ষান্তির প্রস্তাব দেয়, কিন্তু কার্যত তারা ঋণ বাতিল করেনি, পরিস্থিতিকে বিবেচনা করতে শুরু করে নগদ অর্থ প্রবাহের সমস্যা হিসেবে, যা ক্রমান্বয়ে মিটে যাবে। আরো খারাপ খবর হলো, অব্যাহতির বিস্তার বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ কিংবা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রাইভেট করপোরেশনগুলোর মালিকানাধীন ঋণ পর্যন্ত পৌঁছায়নি। যে কারণে দরিদ্র দেশগুলোকে এখন পর্যন্ত ঠিকই করে যেতে হচ্ছে বিশাল অঙ্কের ঋণ পরিশোধ, অথচ সেগুলো বহন করার মতো পর্যাপ্ত শক্তি তাদের অর্থনীতিগুলোর মধ্যে অবশিষ্ট নেই।

সম্প্রতি প্রকাশিত একটি অর্থনৈতিক রিপোর্টে দেখা গেছে, নিম্নতর আয়ের দেশগুলো শুধু এ বছরেই বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের ঋণের কিস্তি পরিশোধ করবে ১ হাজার ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার (১ লাখ ১০ হাজার ৫০০ কোটি)। এর প্রায় সবটাই পাবে ধরার সবচেয়ে ধনী কয়েকটি করপোরেশন-গোল্ডম্যান স্যাকস, ইউএসবি, এইচএসবিসি, লিগ্যাল অ্যান্ড জেনারেল এবং যেটির নাম না বললেই নয়, সেই ব্ল্যাকরক। এই ব্ল্যাকরক হচ্ছে মাল্টি-প্রিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ ফান্ড, যার সম্পদের মূল্য পুরো আফ্রিকা মহাদেশের জিডিপির আড়াই গুণ। ঘানা, কেনিয়া, নাইজেরিয়া, সেনেগাল ও জাম্বিয়াকেই তারা ঋণ দিয়েছে ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের (৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা) কাছাকাছি।

আরও খবর
আরও
 ইউনিভার্স ট্রিবিউন

About The Author