প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্ট্যান্সের ক্রমবর্ধমান সংকট মোকাবেলায় পদক্ষেপ বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়ে ওয়ান হেলথ গ্লোবাল লিডার্স গ্রুপ অন অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর)-এর কো- চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দিয়েছেন। বিশ্বের অন্যান্য দেশের নেতৃবৃন্দও এতে যোগ দিয়েছেন।
আজ ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন (এফএও) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর)-এর ক্রমবর্ধমান সংকট বৃদ্ধির ব্যাপারে বিশ্বকে সতর্ক করতে অন্যান্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন।’
এর আগে, শেখ হাসিনা ও বার্বাডোসের প্রধানমন্ত্রী মায়া আমোর মোতলেইকে এএমআর এর কো-চেয়ারম্যান করা হয়। গত শুক্রবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইও), এফএও এবং ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন ফর এনিম্যাল হেলথ (ওআইই) যৌথভাবে এই গ্রুপটির সূচনা করে।গ্রুপটির সদস্যদের মধ্যে বিভিন্ন সরকার প্রধান, মন্ত্রী এবং বেসরকারি খাত ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ রয়েছেন।
অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্ট্যান্স এর উপর ইন্টারেজেন্সি কোঅর্ডিনেশন গ্রুপের সুপারিশে ও জাতিসংঘ মহাসচিবের সহায়তায় রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে ওঠা ঠেকাতে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষে গ্রুপটি গঠন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়ার্ল্ড অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল অ্যাওয়ারনেস উইক-এ অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্ট্যান্সের ওপর ওয়ান হেল্থ গ্লোবাল লিডার্স গ্রুপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে (অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্ট্যান্সের জন্য) অ্যান্টিবায়োটিক দুষ্প্রাপ্য হয়ে যাচ্ছে এবং খুব শিগগিরই আমরা এমন আরেকটি বৈশ্বিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে পারি, যা চলমান কোভিড-১৯ মহামারির চেয়েও অনেক ভয়াবহ।’
বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী অধিকতর আর্ন্তজাতিক সমন্বয় ও বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্ট্যান্স বা এএমআর হচ্ছে শরীরে কোন অনুজীবের (ব্যাক্টিরিয়া) নির্মূলে প্রয়োগকৃত নির্দিষ্ট ওষুুধের বিরুদ্ধে ওই অনুজীবের টিকে থাকার ক্ষমতা অর্জন করা। মানব ও পশু দেহ এবং কৃষিতে অ্যান্টিমাইক্রোবায়ালসের অতিরিক্ত ও যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণে এই সংকটের সৃষ্টি হয়।
রেজিস্ট্যান্ট মাইক্রো-অর্গানিজম পশু বা পরিবেশ থেকে মানব দেহে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
রেজিস্ট্যান্স একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু ওষুধের যথেচ্ছ ব্যবহার, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সঠিক চিকিৎসার অভাবে এবং বৈশ্বিক বাণিজ্য ও ভ্রমণের কারণে এটা বেড়ে যায়।
এফএও, ওআইই ও ডব্লিউএইচও এর মহাপরিচালকগণ ড্রাগ রেজিস্ট্যান্সের দ্রুত বৃদ্ধির বিষয়টিকে মানুষ, পশু ও পরিবেশের স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঝুঁকির মধ্যে পড়া এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা (এসডিজিএস) লক্ষ্য অর্জনের পথে বাধা হিসেবে বর্ণনা করেন।
এফএও’র মহাপরিচালক কিউই্রু ডোঙ্গিউ বলেন, ‘কোভিড-১৯ সংকটকালে আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে এএমআর একটি ‘ধীর গতির’ মহামারি। এটা বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য দীর্ঘমেয়াদী ঝুঁকি। এটা মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্ট্যান্স মোকাবেলা প্রক্রিয়া জোরদারে বিভিন্ন দেশের সরকার, উৎপাদক, ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সকলের জন্য এফওএ ২০২১-২০২৫ এর জন্য একটি নতুন অ্যাকশন প্ল্যান চালু করেছে।
ডব্লিউএইচও এর মহাপরিচালক টেড্রোস আডহানোম গেব্রেইয়েসুস বলেন, ‘অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্ট্যান্স এই প্রজন্মের জন্য একটি অন্যতম প্রধান স্বাস্থ্যগত সংকট এবং এটা সমাধানের ভার আমরা কিছুতেই পরবর্তী প্রজন্মের ওপর ছেড়ে যেতে পরি না।’
বাংলাদেশ এএমআর মোকাবেলায় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ২০১৭ সালে দেশের শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসকও বিজ্ঞানীরা বাংলাদেশ এআরএম রেসপন্স এলাইয়েন্স (বিএআরএ) প্রতিষ্ঠা করেন। বিএআরএ’র সদস্যরা এফএও এবং ডব্লিউএইচও’র যৌথ দিকনির্দেশনার ওপর ভিত্তি করে অ্যান্টিমাইক্রোবায়ালের ব্যবস্থাপত্র দেন।
বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক মিয়া সেপ্পো নতুন এই উচ্চ পর্যায়ের সমন্বয় গ্রুপটিকে স্বাগত জানান।
তিনি বলেন, ‘এই উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন গ্রুপটির সূচনাা একটি এমন সংকটময় মুহূর্তের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যখন অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্ট্যান্স একটি ক্রমবর্ধমান সংকট। বাংলাদেশ বৈশ্বিক এই সমস্যা মোকাবেলায় পদক্ষেপ গ্রহণে অঙ্গীকারাবন্ধ। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন।’
তিনি আরো বলেন, এফএও এবং ডব্লিউএইচও বাংলাদেশে ওয়ান হেলথ প্রতিশ্রুতিতে তাদের সহায়তা অব্যহত রাখবে।