ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ভবানীপুর উপনির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে জয়ী হবেন তা সবারই ধারণা ছিল। কিন্তু তার জয়ের ব্যবধান যে এত হবে তা ছিল অনেকের কল্পনার বাইরে।
রোববার হিন্দুস্তান টাইমসের খবরে বলা হয়, সকাল থেকেই তিনি এগিয়ে ছিলেন গণনায়। বেলা গড়িয়ে যখন ঘড়ির কাঁটা ২টো ১০ মিনিট তখন ২১ রাউন্ড শেষে তার জয়ের ব্যবধান ৫৮ হাজার ৮৩২। ৮৪ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছেন। সেখানে বিজেপি এবং সিপিআইএম প্রার্থীরা ধারে কাছে আসতে পারেননি। কিন্তু এই জয়ের নেপথ্যে বেশ কয়েকটি কারণ কাজ করল।
মমতার জয়ের তিন কারণ
মমতার জয় নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস।
বিশ্লেষণে মমতার বিশাল জয়ের প্রথম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, বিজেপির প্রার্থী নির্বাচনই ছিল মারাত্মক ভুল। বাঙালি নারীর বিরুদ্ধে দাঁড় করানো হয়েছিল অবাঙালি প্রার্থীকে। যা মানুষ সমর্থন করেনি। তার ওপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে ব্যক্তিত্ব তার সঙ্গে প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল কার্যত বেমানান। বিজেপি নেতা জয় বন্দ্যোপাধ্যায় এই কথা প্রকাশ্যে স্বীকারও করেছিলেন। যা নিয়ে রাজ্য–রাজনীতিতে ব্যাপক আলোচনা হয়।
দ্বিতীয় কারণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়, প্রচারণায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের মাঠে নামানো। হরদীপ সিং পুরী থেকে স্মৃতি ইরানি—পশ্চিমবঙ্গে এসে প্রচার করে গেছেন। আর ওই প্রচারণায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে নানা মন্তব্য করেছিলেন। যা এখানের মানুষ মেনে নেয়নি।
তৃতীয় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, এখানে বিজেপি প্রার্থীকে দেখা গিয়েছিল পুলিশের ওপর চোখ রাঙাতে। সেটাও মানুষ ভালভাবে নেননি। যা ভোটবাক্সে প্রভাব ফেলেছে।
চতুর্থ কারণ হলো-ভবানীপুর অঞ্চলটি নানা ভাষা, ধর্ম, বর্ণ, জাতিকে নিয়ে গঠিত। এখানে ঔদ্ধত্য মানুষ পছন্দ করেন না। বরং মিলেমিশে সহাবস্থান করতেই অভ্যস্ত। সেখানে বাঙালি–অবাঙালি বিভেদ করা আরও বড় ভুল হয়ে দাঁড়িয়েছিল বিজেপির। যার পুরো ফায়দাটি পেয়েছেন ঘরের মেয়ে মমতা। তিনি ষোল আনা মসজিদ থেকে মন্দির, গুরুদ্ধার সর্বত্র পৌঁছেছিলেন। সর্বধর্ম সমন্বয়ের বার্তা দিয়েছিলেন।
পঞ্চম কারণ হলো- বিজেপির আইটি সেলের আপত্তিকর কর্মকাণ্ড। ধর্মীয় সম্প্রীতির বিষয়ে মমতার উদারতাকে নোংরাভাবে উপস্থাপন করে বিজেপির আইটি সেলের নেতা অমিত মালব্যকে বারবার হিন্দু–মুসলিম বিভেদের টুইট করতে থাকেন। এটাই ছিল কফিনের শেষ পেরেক। আর সেটাই হয়েছে। মমতা ভবানীপুরে নিজের গড়া ২০১১ সালের রেকর্ডই এবার ভেঙেছেন।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ব্যবধানের রেকর্ড যেমন ভাঙলেন, তেমনই ভাঙলেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের রেকর্ড। আবার গড়লেন বিরাট অঙ্কের ভোটের মাইলফলক। তিনি মোট ভোট পেয়েছেন ৮৪ হাজার ৩৮৯ ভোট। খেলা শেষে ফলাফল ৩–০ দেখতে পাচ্ছে মানুষ।