ঝিনাইদহ পৌরসভায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিয়োগ করা প্রশাসকের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়েছে। বুধবার বিকাল সোয়া ৩টার দিকে স্থানীয় সরকার জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঝিনাইদহের উপ-পরিচালক (উপ-সচিব) মো. ইয়ারুল ইসলামের কাছে মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু দায়িত্ব বুঝে দেন।
এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. সেলিম রেজা, হরিণাকুণ্ডু উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসাইন, পৌরসভার সচিব মো. মুস্তাক আহম্মেদ, পৌরসভার ওয়ার্ড কমিশনারগণ ও কর্মকর্তা কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড তুলে ধরে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন বিদায়ী মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু । তিনি বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের সময় পৌরসভার তহবিলে মাত্র ১২ লাখ টাকা ছিল। বিদায় বেলায় নগদ দুই কোটি ৩৬ লাখ টাকা রেখে যাচ্ছেন তিনি।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে ঝিনাইদহ পৌরসভাকে ২০১৫ সালে প্রথম আইএসও সনদ প্রদান করা হয় মর্মে উল্লেখ করে সাইদুল করিম মিন্টু আরও বলেন, নিজ দলের প্রতিপক্ষদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলাম।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ একদিন খুলে যাবে। মানুষ ভালো কাজের মূল্যায়ন করবেই।
নবনিযুক্ত প্রশাসক মো. ইয়ারুল ইসলাম বলেন, খুব শিগগিরি ঝিনাইদহ পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। স্বল্প সময়ের জন্য পৌরসভার কার্যক্রম পরিচালনায় সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
বিদায়ী মেয়র দায়িত্ব হস্তান্তর শেষে হাসি মুখে প্রশাসককে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান এবং তাকে (প্রশাসককে) মেয়রের চেয়ারে বসিয়ে দেন। এরপর তিনি মেয়রের কক্ষ থেকে বেরিয়ে পৌরভবনের সামনে অপেক্ষমাণ জিপের কাছে আসেন। এ সময় ঘটে যায় হৃদয়বিদারক ঘটনা।
ওয়ার্ড কমিশনার, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা ছুটে আসেন তার কাছে। বিদায়ী মেয়রকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা। কিছুতেই থামানো যাচ্ছিল না সেই কান্না।
শুধু তাই নয়, সবাই বিদায়ী মেয়রের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। শেষ মুহূর্তে নিজেও কাঁদলেন বিদায়ী মেয়র। উপস্থিত সাধারণ মানুষ চোখে জল ঠেকাতে পারেননি। কাঁদলেন তারাও।
ঝিনাইদহ পৌরসভার ইতিহাসে এমন ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি।
২০১১ সালের ১৩ মার্চ ঝিনাইদহ পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। মেয়র পদে নির্বাচিত হন জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু। দায়িত্ব গ্রহণ করেন ওই বছরের ২৮ মার্চ।
নির্বাচিত পরিষদের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় একই বছরের ৩ এপ্রিল। সেই মোতাবেক ২০১৬ সালের ২ এপ্রিল মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরবর্তীতে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সুরাট ইউনিয়নের লউদিয়া মৌজার আংশিক ও পাগলাকানাই ইউনিয়নের কোরাপাড়া এবং গয়েশপুর মৌজার আংশিক পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। নতুন এই সীমানা নির্ধারণ করা নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়। উচ্চ আদালতে ২০১৬ সালে পৃথক দুইটি এবং ২০১৭ সালে আরও একটি রিট মামলা দায়ের করা হয়। এতে পৌরসভার নির্বাচন ঝুলে পড়ে।
অবশেষে ওই (রিট) মামলার রায়ে পৌরসভার মেয়র পদ শূন্য ঘোষণা করে আদেশ দেন সংশ্লিষ্ট উচ্চ আদালত। এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিলেট ডিভিশনে রিভিউ পিটিশন দায়ের করে বাদীপক্ষ।
চলতি ২০২১ সালের ৩০ জুন রিভিউ পিটিশন শুনানি শেষে রায় ঘোষণা করেন আপিলেট ডিভিশন। এ রায়ে ৬ মাসের মধ্যে ঝিনাইদহ পৌরসভা, পাগলাকানাই ও সুরাট ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক নিয়োগসহ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আদেশ প্রদান করেন সংশ্লিষ্ট আদালত।
আদালতের আদেশ পালনে রোববার (২১ নভেম্বর) স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ পৌর- ১ শাখার উপ-সচিব মোহাম্মদ ফারুক হোসেন স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্তে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে উপ-পরিচালক স্থানীয় সরকার জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঝিনাইদহকে প্রশাসক হিসেবে ঝিনাইদহ পৌরসভার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
হিসাব মতে, নির্বাচিত মেয়র পদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর (মামলা সংক্রান্ত জটিলতায়) পাঁচ বছর ১০ মাস মেয়র পদে অতিরিক্ত সময় দায়িত্ব পালন করেন সাইদুল করিম মিন্টু। অর্থাৎ সর্বমোট দশ বছর সাত মাস মেয়র ছিলেন তিনি। এ সময়ে শ্রেষ্ঠ পৌরসভা, ডিজিটাল পৌরসভার স্বীকৃতি, আইএসও সনদসহ অসংখ্য আন্তর্জাতিক সম্মান অর্জন করে ঝিনাইদহ পৌরসভা।