বগুড়া সদর উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হয়েছে। আটটি ইউনিয়নের মধ্যে মাত্র দুটিতে বিজয়ী হয়েছেন নৌকার প্রার্থী। অবশিষ্ট ছয়টি ইউনিয়নে স্বতন্ত্র ও বিদ্রোহীদের কাছে পরাজিত হয়েছেন নৌকা মার্কার প্রার্থীরা।
পরাজয়ের কারণ সম্পর্কে জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আল রাজি জুয়েল বলেছেন, নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে নৌকার নির্বাচন না করায় তাদের এ ভরাডুবি হয়েছে।
নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, বগুড়া সদরের শেখেরকোলা ইউনিয়নে স্বতন্ত্র আদলে বিএনপি প্রার্থী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রশিদুল ইসলাম মৃধা (মোটরসাইকেল) পাঁচ হাজার ৯১৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম নৌকার কামরুল হাসান ডালিম পেয়েছেন তিন হাজার ৯৩৬ ভোট।
নামুজা ইউনিয়নে নৌকার রফিকুল ইসলাম নয় হাজার ৪৫৯ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তার নিকটতম মোটর সাইকেল মার্কার এসএম রাসেল পেয়েছেন ছয় হাজার এক ভোট।
গোকুল ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী (ঘোড়া) জিয়াউর রহমান জিয়া পাঁচ হাজার ৭৫৯ ভোটে চেয়ারম্যান হয়েছেন। তার নিকটতম নৌকা মার্কার প্রার্থী সওকাতুল ইসলাম সরকার পেয়েছেন পাঁচ হাজার ৮৮ ভোট।
সাবগ্রাম ইউনিয়নে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে লড়াই হয়েছে। এখানে নৌকা মার্কার ইসরাইল হক সরকারকে পরাজিত করে চেয়ারম্যান হয়েছেন ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ফরিদ উদ্দিন সরকার (মোটরসাইকেল)।
নিশিন্দারা ইউনিয়নে মোটরসাইকেল মার্কার প্রার্থী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সহিদুল ইসলাম ছয় হাজার ৯৯২ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকার রিজু হোসেন পেয়েছেন মাত্র এক হাজার ৬১২ ভোট।
শাখারিয়া ইউনিয়নে নৌকার এনামুল হক রুমি চার হাজার ৭৯ ভোটে চেয়ারম্যান হয়েছেন। তার নিকটতম আনারস মার্কার নাজমুল হাসান পেয়েছেন তিন হাজার ৮০৬ ভোট।
নুনগোলা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী (আনারস) বদরুল আলম বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন অটোরিকশা প্রতীকের আবদুর রশিদ। এখানে নৌকার প্রার্থী আলিমুদ্দিন ভোট বর্জন করেও পেয়েছেন ১২২ ভোট।
রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সদর উপজেলার আট ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। চেয়ারম্যান পদে ৩৫ জন, সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ৯৩ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ২৬১ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। মধ্যরাতে ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে বগুড়া সদরের ছয়টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের পরাজয়ের ঘটনায় ত্যাগী নেতাকর্মীদের মাঝে প্রচণ্ড ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। কিন্তু বহিষ্কারের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারছেন না।
নাম ও পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের কয়েকজন নেতাকর্মী জানান, দায়িত্বশীল নেতারা প্রার্থী নির্বাচন ভুল করেছেন। কোনো কোনো ইউনিয়নে অযোগ্য প্রার্থীকে নৌকা দেওয়া হয়েছে। ফলে সেখানে বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র আদলে বিএনপির নেতারা বিজয়ী হয়েছেন। আবার অনেকে সব ইউনিয়নের প্রার্থীদের অবজ্ঞা করে শুধু তার নিজের পছন্দের ইউনিয়নের প্রার্থীকে নিয়ে ব্যস্ত থেকেছেন। ফলে ৮টির মধ্যে ৬টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদ হাতছাড়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনু ও সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপুর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। দপ্তর সম্পাদক আল রাজি জুয়েল জানান, ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ খুব শক্তিশালী; তাদের সমর্থিত প্রার্থীদের হারানো সম্ভব নয়। নির্বাচনে প্রার্থী ও নেতাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব এবং ঐক্য না থাকায় এ ভরাডুবি হয়েছে।