অর্থপাচারে জড়িত ১৪টি প্রতিষ্ঠান ও ২৯ ব্যক্তির (মোট ৪৩) তালিকা রোববার হাইকোর্টে জমা দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের বেঞ্চে এ তালিকা জমা দেওয়া হয়।
তালিকায় রয়েছে আলোচিত ধনকুবের মুসা বিন শমসের ওরফে প্রিন্স মুসা, আবদুল আউয়াল মিন্টু, তার ছেলে তাবিথ আউয়ালসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ীর নাম।
তালিকা পেয়ে আদালত বলেছেন, এত কিছুর পরও অর্থপাচার রোধ করা যাচ্ছে না। দেশের টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে। যেভাবে হোক তা ঠেকাতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে, না হলে অর্থপাচার রোধ করা সম্ভব হবে না। এজন্য সরকার, বিরোধী দল, আইনজীবী, সাংবাদিকসহ সব পেশার মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। এ ব্যাপারে সহযোগিতা করতে হবে।
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান আদালতকে দুদকের তালিকা সংবলিত প্রতিবেদনটি পড়ে শোনান। তিনি বলেন, আদালতের নির্দেশে দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত সাপেক্ষে অর্থপাচারের একটি তালিকা করেছে। এতে ১৪টি প্রতিষ্ঠান ও ২৯ ব্যক্তির নাম রয়েছে।
খুরশীদ আলম খান অর্থপাচার নিয়ে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চুক্তির বিষয়টি তুলে ধরেন। বলেন, বিদেশে পাচার করা টাকা উদ্ধারের বিষয়ে আইনের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন অর্থপাচারের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। এ সময় আদালত অর্থপাচার রোধে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে শুনানি সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মুলতবি করেন।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন আইসিআইজে (ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম) ২০১৬ সালে পানামা পেপারস এবং ২০১৮ সালে প্যারাডাইস পেপারস তৈরি করে। প্রতিবেদনে বিদেশে অর্থপাচারের তালিকায় প্রায় আট লাখ কোম্পানি এবং সাত লাখ ২০ হাজারের বেশি ব্যক্তির নাম উঠে আসে। এতে অর্থপাচারকারী হিসেবে বাংলাদেশের ৮২ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামও তুলে ধরা হয়। তবে দুদকের দেওয়া প্রতিবেদনে ৪৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান যুগান্তরকে বলেন, কমিশন তদন্ত করে ১৪টি প্রতিষ্ঠান ও ২৯ ব্যক্তির তালিকা প্রস্তুত করেছে। সেই তালিকা কমিশন আমাকে দিয়েছে। এর বাইরে আমি কিছু বলতে পারব না।
প্রসঙ্গত, পানামা পেপারস ও প্যারাডাইস পেপারসের প্রতিবেদন থেকে যুগান্তরসহ তিনটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে দুদক প্রতিবেদনটি তৈরি করে।
বিদেশে অর্থপাচারকারীদের বিষয়ে পরবর্তী তথ্য জানাতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রাষ্ট্রপক্ষকে সময় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। অর্থপাচার বিষয়ে দুদকসহ কয়েকটি রাষ্ট্রীয় সংস্থার প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।