ছবি: সংগৃহীত

করোনাভাইরাসের টিকা মজুদ করছে বিশ্বের ধনী দেশগুলো। নিজেদের জনসংখ্যার প্রায় তিনগুণ ক্রয়াদেশ দিয়েছে তারা। এ কারণে দরিদ্র দেশগুলোর বেশির ভাগ মানুষ প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের প্রতিষেধক থেকে বঞ্চিত হবে। এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার ও দাতা সংস্থার একটি জোট।

প্রায় ৭০টি নিম্ন আয়ের দেশ তাদের প্রতি ১০ জন নাগরিকের মধ্যে মাত্র একজনকে কোভিড-১৯-এর টিকা দিতে পারবে বলে জানিয়েছে পিপলস ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স।

এদিকে ফাইজারের টিকা নিরাপদ এবং ৯৫ শতাংশ কার্যকর বলে নিশ্চিত করে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ)। যুক্তরাষ্ট্রে টিকাটির অনুমোদন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আজ বৈঠকে বসছে সংস্থাটি। খবর বিবিসি, সিএনএনসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের।

বিশ্বজুড়ে ন্যায্য ও সুষ্ঠুভাবে টিকা সরবরাহে বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। টিকা সরবরাহে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ জোট কোভ্যাক্স ৯২টি নিম্ন আয়ের দেশে ৭০ কোটি ডোজ টিকা পাঠানোর চুক্তিও করেছে।

কিন্তু এতসব পরিকল্পনার পরও বিশ্বব্যাপী ন্যায্য টিকা বিতরণ সম্ভব হবে না বলে মন্তব্য করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, অক্সফাম, গ্লোবাল জাস্টিস নাও-সহ বিভিন্ন সংস্থার জোট পিপলস ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স।

তারা জানায়, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা তাদের উৎপাদিত টিকার ৬৪ শতাংশ ডোজ উন্নয়নশীল দেশগুলোয় সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তা সত্ত্বেও দরিদ্র ও ধনী দেশগুলোর মধ্যে টিকাপ্রাপ্তির ব্যবধান ব্যাপক হবে।

জোটটি জানায়, যেসব সম্ভাব্য টিকা নিয়ে আলোচনা চলছে, এর সবই যদি ব্যবহারের অনুমতি পায়, তাহলে ধনী দেশগুলো যত টিকার ক্রয়াদেশ দিয়েছে তাতে তাদের মোট জনসংখ্যাকে তিনবার টিকা দেওয়া যাবে। শুধু কানাডা টিকার যত ডোজের ক্রয়াদেশ দিয়েছে তাতে কানাডার প্রত্যেক নাগরিককে পাঁচবার টিকা দেয়া যাবে।

জোটটি বলছে, ধনী দেশগুলো বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১৪ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করলেও তারা ইতোমধ্যে সম্ভাব্য সব টিকার ৫৩ শতাংশ ডোজ কিনে নিয়েছে।

অক্সফামের স্বাস্থ্যনীতি ব্যবস্থাপক আনা ম্যারিয়ট বলেন, কাউকেই তার পকেটে কী পরিমাণ অর্থ আছে বা কোন দেশে তিনি বাস করেন তার ওপর ভিত্তি করে জীবনরক্ষাকারী টিকা পেতে বাধা দেয়া উচিত হবে না। কিন্তু নাটকীয় কোনো পরিবর্তন না হলে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ নিরাপদ ও কার্যকর টিকা পাবে না।

এ পরিস্থিতিতে পিপলস ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স সব ওষুধ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে তাদের কোভিড-১৯ টিকার প্রযুক্তি এবং মেধাসত্ত্ব উন্মোচন করে দিতে আহ্বান জানিয়েছে। যার মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে টিকা উৎপাদন করা যায়। এতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে নেতৃত্ব দেয়ার পরামর্শ দিয়েছে জোটটি।

ফাইজারের টিকা নিরাপদ ও কার্যকর-যুক্তরাষ্ট্র : ফাইজার-বায়োএনটেকের করোনার টিকার নিরাপত্তা সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) নিশ্চিত করেছে, এই টিকা ৯৫ শতাংশ কার্যকর। টিকাটি অনুমোদন না দেয়ার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোনো উদ্বেগ খুঁজে পায়নি এফডিএ।

ফলে যুক্তরাষ্ট্রে এই টিকা জরুরি ব্যবহারের জন্য অনুমোদন পাওয়ার পথ সুগম হল। এফডিএ এখন পর্যন্ত ফাইজার-বায়োএনটেকের করোনার টিকার অনুমোদন দেয়নি। এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নিতে আজ বৈঠকে বসছে এফডিএ।

এফডিএ বলেছে, বয়স, গোষ্ঠী, লিঙ্গ, বর্ণভেদে সবার ক্ষেত্রে এই টিকা সমান কাজ করে। তাছাড়া এই টিকার প্রথম ডোজ প্রয়োগের ১০ দিন পরই করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে দৃঢ় সুরক্ষা দিতে পারে।

বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে যুক্তরাজ্য ২ ডিসেম্বর মার্কিন ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ফাইজারের টিকা জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। ফাইজারের এই টিকা উদ্ভাবনে সহযোগিতা করেছে জার্মানির প্রতিষ্ঠান বায়োএনটেক। যুক্তরাজ্যের পর বিশ্বের দ্বিতীয় দেশ হিসেবে এ টিকার জরুরি অনুমোদন দিয়েছে বাহরাইন। ৪ ডিসেম্বর দেশটির পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেয়া হয়।

টিকা বিতরণে কানাডায় ১৪ কেন্দ্র স্থাপন : নাগরিকদের কাছে সহজে করোনাভাইরাসের টিকা পৌঁছে দিতে বিভিন্ন প্রদেশে ১৪টি বিতরণ কেন্দ্র স্থাপন করেছে কানাডা। এগুলোয় ফাইজারের টিকা সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় তাপমাত্রার সুবিধাও রয়েছে। ফাইজারের টিকা মাইনাস ৭০ ডিগ্রি তাপমাত্রার রেফ্রিজারেটরে রাখতে হয়।

আরও খবর
আরও