Facebook
Twitter
Youtube
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
আজ মহান মে দিবস। বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের দিন। ১৮৮৬ সালের এই দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। ওই দিন তাদের আত্মদানের মধ্যদিয়ে শ্রমিক শ্রেণীর অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য শ্রমিকদের আত্মত্যাগের এই দিনকে তখন থেকেই সারা বিশ্বে ‘মে দিবস’ হিসেবে পালন করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে এবারের মে দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘মালিক-শ্রমিক নির্বিশেষ মুজিববর্ষে গড়বো দেশ’।
মহান মে দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল শ্রমজীবী মানুষকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণ জনিত মহামারিতে বিশ্ব আজ বিপর্যস্ত। বাংলাদেশেও করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয়াল থাবা আঘাত হেনেছে। ফলে গভীর সংকটে পড়েছে শিল্প-প্রতিষ্ঠানসহ দেশের শ্রমজীবী মেহনতি মানুষ। এ পরিস্থিতিতে সরকার জনগণের পাশে থেকে ত্রাণ পরিচালনাসহ সর্বাত্মক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে সরকার বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। তাই কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেছেন। তিনি ছিলেন শ্রমজীবী মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু। ১৯৭২ সালে জাতির পিতার উদ্যোগ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সদস্যপদ লাভ করে এবং আইএলও’র ছয়টি কোর কনভেনশনসহ ২৯টি কনভেনশন অনুসমর্থন করে। এটি শ্রমজীবী মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও তাদের অধিকার রক্ষায় এক অনন্য মাইলফলক। বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন পূরণে শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণে সকলকে দলমত নির্বিশেষে একাত্ম হতে হবে। এই অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে শ্রমিক-মালিক সম্প্রীতি দেশের উন্নয়নের পথকে তরান্বিত করবে বলে আমার বিশ্বাস।
বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সরকার দেশের শ্রমজীবী মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও কল্যাণে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয়াল পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের সরকার শ্রমজীবী মানুষের পাশে থেকে ত্রাণ বিতরণসহ সর্বাত্মক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সরকার সংকট মোকাবিলায় শ্রমিকদের বেতনের জন্য আট হাজার ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে।
তিনি আরও বলেন, রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক, চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা শিল্পে কর্মহীন হয়ে পড়া ও দুঃস্থ শ্রমিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন নীতিমালা, ২০২০ বাস্তবায়নের জন্য শ্রম অধিদপ্তরের অনুকূলে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করেছে। করোনা পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কল-কারখানা চালু রাখার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিশ্চিত করতে হবে।
মহান মে দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে শ্রমিক সমাবেশ, শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
এদিকে রেবেকা সুলতানা, অনারারি নির্বাহী পরিচালক, অন্যচিত্র বাংলাদেশ বলেন, আজ আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস আমাদের প্রত্যাশা, আগামীর পৃথিবী হোক শ্রমজীবীবান্ধব।
শ্রমিকের হাতুড়ি সভ্যতা বিনির্মাণের সত্যিকারের হাতিয়ার। শ্রমের বিনিময়েই নিশ্চিত হয় পৃথিবীর এগিয়ে চলা, পৃথিবীর উন্নয়ন। সৃষ্টি কিংবা ধ্বংস, যে কোনো অর্জনের পেছনে শ্রম প্রদানের বিকল্প নেই। শ্রমিকরাই সভ্যতা বিনির্মাণের মূল কারিগর। অথচ সভ্যতার শুরু থেকে শ্রমিকরাই শোষণ ও বঞ্চনার শিকার বেশি। এডাম স্মিথ ও ডেভিড রিকারড প্রমাণ করেছিলেন, মানুষের শ্রমের ফলেই মূল্য তৈরি হয়। মূল্যের শ্রমতত্ত্ব প্রমাণ করল শ্রমিকের শ্রমের ভূমিকার কথা। কিন্তু এই প্রমাণের পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমের বিনিময়ে শ্রমিকের জন্য কী পাওয়া যাবে-সে প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেল না। একজন শ্রমিক গ্রামের ভিটেমাটি, চাষাবাদ, স্বজন-পরিজন ছেড়ে শহরে এসে কারখানায় শ্রমিক হিসাবে দিনরাত কাজ করে যায়; কিন্তু এত ত্যাগের বিনিময়েও জীবনের ন্যূনতম চাহিদা তারা আজও পূরণ করতে পারছে না। এর বিপরীতে মালিকপক্ষের জীবনযাপনে বিলাসিতা বেড়েই চলেছে। এ বৈষম্যই শ্রমিকদের মধ্যে বিদ্রোহ তৈরি করে, ক্ষোভের জন্ম দেয়।
আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে ৮ ঘণ্টা কর্মদিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি থাকলেও বাস্তবে শ্রমিকরা সে সুযোগ নিতে পারছে না। নিুমজুরির ফাঁদে পড়ে শ্রমজীবী মানুষ ওভারটাইম করতে বাধ্য হয়। কেননা ওভারটাইম না করলে সীমিত আয়ে তাদের সংসার চলবে না। অন্যদিকে বেকারত্বের সুযোগ নিয়ে মালিকপক্ষ সস্তায় মানুষের শ্রম কিনে নিচ্ছে। কাজের সন্ধানে ব্যাকুল শ্রমশক্তি মজুরির দিকে না তাকিয়ে মালিকপক্ষের ফাঁদে পা দিয়ে সস্তায় বিক্রি করছে নিজেদের ঘাম। প্রতি বছর দেশের শ্রমবাজারে প্রবেশ করে ২০ থেকে ২২ লাখ তরুণ-তরুণী। এর মধ্যে মাত্র ২ লাখের মতো কর্মসংস্থান রাষ্ট্র করতে পারে। প্রতিবছর ৭ থেকে ১০ লাখ মানুষ বিদেশে পাড়ি জমায় কাজের সন্ধানে। অবশিষ্টরা দেশে কোনোভাবে নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করে টিকে থাকে।
বর্তমানে আমাদের কারখানায়, এমনকি কৃষিকাজেও আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে। আধুনিক এসব যন্ত্রপাতি অনেক শ্রমিকের কাজ কেড়ে নিচ্ছে। যন্ত্রের ব্যবহার বৃদ্ধির সমান্তরালে শ্রমিকের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে উৎপাদন বাড়লেও শ্রমিকের শ্রম প্রদানের সময় কোনোভাবেই কমছে না। শ্রমিকদের একটা অংশ কাজ হারাচ্ছে; আর অন্য একটা অংশ দীর্ঘ সময় কাজে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। নারী শ্রমিকের কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মতো হলেও এসব কাজে যুক্ত থেকে ঘর-সংসার সামলানোর কারণে তাদের পরিশ্রম অসহনীয় মাত্রায় চলে যাচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রম করার কারণে নারীরা দ্রুত হারিয়ে ফেলছে তাদের কাজ করার ক্ষমতা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে চল্লিশোর্ধ্ব নারীদের কারখানার কাজে নেওয়া হচ্ছে না।
করোনা মহামারির এই সংকটময় সময়েও দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন শ্রমিকরা। লকডাউন বা কাজের ক্ষেত্রগুলোতে চলমান শিথিলতায় শ্রমিককে কাজ করে যেতে হচ্ছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। তাদের জন্য যথাযথভাবে স্বাস্থ্য সুরক্ষা যেমন নিশ্চিত করা হচ্ছে না; অন্যদিকে ঝুঁকিপূর্ণ সময়ে কাজের জন্য কোনো প্রণোদনাও দেওয়া হচ্ছে না। করোনার কারণে অনেক শ্রমিক কাজ হারিয়েছে; আবার অনেক শ্রমিককে পরিস্থিতি বিবেচনার অজুহাতে তার সর্বশেষ পাওনা পরিশোধ না করেই কর্মক্ষেত্র থেকে বিদায় দেওয়া হয়েছে।
শ্রমিকরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও মুষ্টিমেয় মানুষের কাছে তারা জিম্মি। শ্রমিকদের স্বল্প আয়ের বেশিরভাগ ব্যয় হয় খাদ্য ক্রয়, বাড়িভাড়া, পোশাক ক্রয় ও চিকিৎসায়; তাই তাদের কোনো সঞ্চয় থাকে না। ফলে বিপদে বা দুর্দশার সময়ে তারা শুধু দুঃখ-কষ্ট আগলে ধরেই দিনাতিপাত করে। সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে শ্রমিকদের উপযুক্ত কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করা সম্ভব না হলে শ্রমিক অসন্তোষ হ্রাস পাবে না; তেমনি রাষ্ট্র কিছুতেই কল্যাণ রাষ্ট্র হিসাবে আবিত হতে পারবে না। তাই পরিশেষে বলতে চাই, আগামীর পৃথিবী হোক শ্রমজীবীবান্ধব। শ্রমজীবীদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে কোনোভাবেই আগামীর পৃথিবী সুন্দর করা সম্ভব হবে না।
সর্বশেষ
আরও খবর
- আল-রাজী কমপ্লেক্স (জি-৪০১-৩ ), ১৬৬-১৬৭, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্মরণি, বিজয়নগর, ঢাকা-১০০০, বাংলাদেশ
- ফোন : +৮৮ ০২ ৫৫১১১৫০১-২
- ফ্যাক্স : +৮৮ ০২ ৫৫১১১৫০৩
- ই-মেল : info.universetribune@gmail.com
- প্রকাশকঃ মোহাম্মদ আনারুল ইসলাম
- কপিরাইট
- ২০১৯-২০২০ ইউনিভার্স মিডিয়া লিমিটেড
- সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত কপিরাইট