ই-বার্তা।। সমগ্র বিশ্বে প্রায় ১৯৫ টি স্বাধীন দেশ আছে। প্রত্যেক দেশের আছে নিজেস্ব গোয়েন্দা সংস্থা। প্রত্যেক দেশ তার নিজেস্ব সুরক্ষা বজায় রাখতে বা অন্য দেশের সাথে কূটনৈতিক অবস্থা বজায় রাখার জন্য নিজেস্ব গোয়েন্দা সংস্থা ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
২০১৭ সালে বিশ্বের সেরকম শীর্ষ দশ ক্ষমতাধর গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন।
১. বিশ্বের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর গোয়েন্দা সংস্থা হল পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই)। ১৯৪৮ সালে আইএসআই প্রতিষ্ঠিত হয়। আইএসআই এর প্রতিষ্ঠাতা একজন অস্ট্রেলিয়ান বংশভুত ব্রিটিশ সামরিক জেলারেল অফিসার, যিনি পাকিস্তান মিলিটিরি তে চাকরি করতেন।
২. ইউএস বা ইউনাইটেড ষ্টেট অফ অ্যামেরিকার সিকিউরিটি এজেন্সি সিআইএ আছে তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে। এর পুরো নাম সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (সিআইএ)। ইউএস এর বেসামরিক গোয়েন্দা সংস্থা এটি। মধ্যপ্রাচ্য সহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে যথেষ্ট কার্যকরী এই গোয়েন্দা সংস্থা ইউএস এর প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা। ১৯৪৭ সালের ২৬ জুলাই এই গোয়েন্দা সংস্থাটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
৩. তালিকার তৃতীয় অবস্থানে আছে ইউনাইটেড কিংডম এর গোয়েন্দা সংস্থা মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স সেকশন সিক্স (এমআইসিক্স)। এর মুল নাম সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস (এসআইএস), যা এমআইসিক্স নামে বেশি সুপরিচিত। ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই গোয়েন্দা সংস্থার সদরদপ্তর ইউকে এর ভক্সল ক্রস নদীর তীর বর্তি অঞ্চলে অবস্থিত।
৪. চতুর্থ অবস্থানে আছে রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস অফ দ্যা ফেডারেশন অফ রাশিয়া (এফএসবি)। রাশিয়ার প্রধান নিরাপত্তা সংস্থা এই এফএসবি। একই সাথে এটি সোভিয়েত দেশ গুলোর নিরাপত্তা সংস্থা হিসেবেও কাজ করে। এই সংস্থা মুলত কাউন্টার টেররিজম, ফেডারেল নিরাপত্তা সহ অন্যান্য বিষয় এবং অনেক আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা বিষয়ে নজরদারি করে।
৫. জার্মান গোয়েন্দা সংস্থা বিএমডি আছে তালিকার পঞ্চম অবস্থানে। এটি জার্মানির আন্তর্জাতিক সমস্যা বিষয়ক গোয়েন্দা সংস্থা। বিএমডি সরাসরি ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় জার্মানির চ্যান্সেলর দ্বারা। এই প্রতিষ্ঠানটির হেডকোয়ার্টার জার্মানির বার্লিনে। ১ এপ্রিল ১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠানটি গঠিত হয়। প্রতি বছর গড়ে ৬.১৫ মিলিয়ন পাউন্ড ব্যায় করা হয় এই বাহিনী পরিচালনা করার জন্য। বিভিন্ন
ধরনের জাতীয়, আন্তর্জাতিক সহ নানা বিষয়ের তথ্য সংগ্রহ মুলত বিএমডির প্রধান কাজ।
৬. রিসার্চ এন্ড এনালাইসিস উইং (RAW) আছে তালিকার ষষ্ঠ অবস্থানে। এটি ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা। RAW ভারতের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থা। এর প্রধান কার্যালয় ভারতের রাজধানী দিল্লীতে। ভারত পাকিস্তান ও সিনো সীমান্তে পরাজয়ের পর ১৯৬৮ সালের ২১ সেপ্টেম্বর মাসে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর মুল কাজ ভারতের সাথে আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ এবং অভ্যন্তরিন ও বৈশ্বিক সামরিক সুবিধা নিশ্চিত করা।
৭. ফ্রান্স গোয়েন্দা সংস্থা দিরেকশন জেনারেল ডি লা সিকিউরিত ইন্টেরিওর অর এক্সটেরিয়র ইন জেনারেল ডিরেক্টরিয়েট ফর এক্সটারনাল সিকিউরিটি (ডিজিএসই)। এটি ফ্রান্সের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সিকিউরিটি এজেন্সি। ১৯৮২ সালে এই গোয়েন্দা সংস্থা চালু করে ফ্রান্স। অনেকাংশে একে সিআইএ এবং এমআইসিক্স এর সাথেও তুলনা করা হয়।
৮. তালিকার অষ্টম অবস্থানে আছে অস্ট্রেলিয়ান গোয়েন্দা সংস্থা অস্ট্রেলিয়ান সিক্রেট ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস (এএসআইএস)। এটি মুলত অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় বন নিরাপত্তা সংস্থা। ১৯৫২ সালের ১৩ মে এএসআইএস গঠিত হয়। এর বাহিনী বিশ্বের অন্যতম বুদ্ধিদীপ্ত কাউন্টার টেররিজম ও আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা বাহিনী হিসেবে অনেক প্রশংসিত ও সুপরিচিত।
৯. নবম অবস্থানে আছে চায়নার গোয়েন্দা সংস্থা মিনিস্ট্রি অফ ষ্টেট সিকিউরিটি (এমএসএস)। ১৯৮৩ সালে গঠিত ও প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক চীনের এই গোয়েন্দা সংস্থা প্রথম দিকে ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন (সিআইডি) কে একত্রীকরণের উদ্দেশ্যে গঠন করা হয়। চায়নার এই গোয়েন্দা সংস্থা তার মাকাও, তাইওয়ান, ও হংকং অংশের সন্ত্রাসবাদ নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলে বিশেষ ভুমিকা পালন করে।
১০. শীর্ষ দশ ক্ষমতাধর গোয়েন্দা সংস্থার তালিকার সর্বশেষ অবস্থানে আছে ইসরাইল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (মোসাদ)। ইসরাইলের জাতীয় এই গোয়েন্দা সংস্থা গঠিত হয়, ১৩ ডিসেম্বর, ১৯৪৯ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রি ডেভিড বেন গরিয়নের নির্দেশে।
স্বাধীন দেশের প্রত্যেক সদস্য সাধারণত জাতিসংঘের সদস্য পদ লাভ করে। তবে জাতিসংঘের সদস্য পদ প্রাপ্তিহীন বেশ কিছু দেশ আছে। কিন্তু এসব দেশে তথা সমগ্র বিশ্বে বর্তমান সময়ে গোয়েন্দা তৎপরতা অনেক বেশি। আর এই প্রধান দশ ক্ষমতাধর গোয়েন্দা সংস্থা তো সারা বিশ্বের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জড়িত।