তৃতীয় ধাপে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়ন পরিষদের ভোটগ্রহণ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আজ রবিবার সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।
সকালে উপজেলার বেশকিছু ইউনিয়নের ভোটকেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে ভোটাররা উৎসব মূখর পরিবেশে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন। প্রতিটি কেন্দ্রেই সকাল থেকেই নারী-পুরুষ ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
উপজেলার ১৩টি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে ৪৯ জন, সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১৯৮ জন ও সাধারণ ওয়ার্ড সদস্য পদে ৪৭৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ১৪৫টি কেন্দ্রে ১ হাজার ৩২টি বুথে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬৬০ জন ভোটার ছিলেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭৪ হাজার ১৪৯ জন ও নারী ভোটার রয়েছে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৫১১ জন। নির্বাচনে ১৪৫ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ১ হাজার ৩২ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও ২ হাজার ৬৪ জন পোলিং অফিসার নিয়োজিত ছিলেন। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষে ১০ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ৫ জন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ৩ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। দুই সহ¯্রাধিক পুলিশ ও আনসার সদস্য ছাড়াও টহলে ছিল র্যাবের একাধিক টিম।
জেলা নির্বাচন অফিসার মোতাওয়াক্কিল রহমান জানান, ভোটাররা ভোটকেন্দ্রগুলোতে উৎসব মুখর পরিবেশে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। শিবগঞ্জ উপজেলার ১৩টি ইউনিযনে ১৪৫টি ভোট কেন্দ্রে ভোটগ্রহন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়। সকাল থেকেই প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটাররা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিয়েছেন। সুষ্ঠুভাবে ভো গ্রহণের জন্য মাঠে র্যাব, পুলিশ, বিজিবিসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সর্তকাবস্থায় ছিলেন এবং নির্বাচন কমিশন সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোথাও কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার ১৩ ইউনিয়নে নির্বাচন উপলক্ষে শনিবার দুপুরে নির্বাচনী সকল কেন্দ্রে ব্যালট ছাড়া সকল নির্বাচনী সামগ্রী বিতরন ও পৌঁছে দেয়া হয়। রবিবার সকালে প্রত্যেক ইউনিয়নে ব্যালট পেপার পৌঁছে দেয়া হয়। উপজেলার নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়নে ইভিএম পদ্ধতিতে এবং ১২ টি ইউনিয়নে ব্যালটে ভোটগ্রহণ করা হয়।
নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়নের রানীহাটি বহুমুখি উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় নারী ভোটাররা ভোট দেয়ার জন্য লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। ভোট দিতে আসা ভোটার রবিউল ইসলাম জানান, প্রথমবারের মত ইভিএম এ ভোট দিলেন তিনি। প্রথমবার ভোট দিলেও ভোট দিতে তার কোন অসুবিধা হয়নি বলেও জানান তিনি। সকালের দিকে ভোটার উপস্থিতি কম থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে তা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রথম দিকে কোন অসুবিধা হয়নি বলে জানান, ওই কেন্দ্রে নিয়োজিত প্রিজাইডিং অফিসার তোফাজ্জল হোসেন। তিনি জানান দুপুর ১টা পর্যন্ত ৪১ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়। অপর কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার কাজী দীন মোহাম্মদ জানান একই সময়ে তার কেন্দ্রে ৪৬ শতাংশ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।
সকালে ছাত্রাজিতপুর ইউনিয়নের চকঘোপাখিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে দেখা যায় পুরুষ ভোটারদের বিশাল লাইন। একই কেন্দ্রে দুপুরে দেখাযায় নারী ভোটাররা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোটা দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়ন বাদে অন্য ইউনিয়নে ব্যালট পেপারে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায়, সেগুলোতে গিয়ে দেখা যায় সকাল বেলায় কেন্দ্রগুলোতে দীর্ঘ লাইন। ভোটারদের সুবিধার জন্য একাধিক লাইন ও বুথ থাকলেও অনেক ভোটার ঢেড় থেকে ২ঘন্টা পর্যন্ত লাইনে দাড়িয়ে থেকে ভোট দিতে পেরেছেন।
উজিরপুর ইউনিয়নের চরখাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের এক ভোটার জানান, আমার যাকে ভাল লেগেছে আমি তাকেই ভোট দিলাম। আমার আশা নির্বাচনে যেই বিজয়ী হোক আমাদের গরীব দুখিদের বিপদে আপদে, সুখে দুখে নির্বাচিত প্রার্থীরা এগিয়ে আসবেন এমনটায় প্রত্যাশা।
রাধাকান্তপুর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এক ৮০ ঊর্ধ্ব মহিলার দেখা পাওয়া যায়। খাটে শুয়ে ৪জনের কাধে চেপে ভোট কেন্দ্রে এসেছেন পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে। বয়সের ভরে নুইয়ে পড়লেও ছেলে ও ছেলের ছেলেদের কাধে চেপে হয়তো জীবনের শেষ ভোট টা দিতে এসেছেন।
তবে ভোট কেন্দ্রের বাইরে ব্যপক উৎসাহ উদ্দিপনা দেখা গেছে।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ভোট গণনা চলছিল। যেসব ইউনিয়নে ভোট হলো সেগুলো হচ্ছে শাহবাজপুর, দাইপুকুরিয়া, মোবরাকপুর, শ্যামপুর, বিনোদপুর, মনকষা, পাঁকা, উজিরপুর, ঘোড়াপাখিয়া, ধাইনগর, চককীর্তি, নয়ালাভাঙ্গা ও ছত্রাজিতপুর।
উল্লেখ্য, প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী না থাকায় নয়ালাভাঙ্গায় মোস্তাকুল ইসলাম পিন্টু ও মনাকষায় মির্জা শাহাদাৎ খুররম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।