রবীন্দ্রনাথ ছিলেন তার যাপনে। তাই রবীন্দ্রনাথের গান গেয়েই বাঙলার রাজকুমারের মরদেহ নিয়ে পথ হাঁটলো অগণিত বাঙালি। কোটি কোটি বাঙালির মনে স্বজন হারানোর বিষাদ। রাজ কুমারের চলে যাওয়ার দুঃখ।
রোববার বিকেলে রবীন্দ্র সদনে তাঁর মরদেহ পৌঁছালে সেখানে ফেলুদাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত ছিলেন অসংখ্য মানুষ। বিকেলে শেষ কৃত্য স¤পন্নের জন্য তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় কেওড়াতলা মহাশ্মশানে। শ্মশানে যাওয়ার পথে অগণিত বাঙালির কন্ঠে ছিল ‘আগুণের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে, এ জীবন পূণ্য করো, এ জীবন পূণ্য করো’। তাঁর মরদেহ মহাশ্মশানে পৌঁছলে গান স্যালুটের মাধ্যমে স¤পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বিদায় জানানো হয় কিংবদন্তী অভিনেতাকে।
৪২ দিনের লড়াই শেষে রোববার দুপুরে কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। গত তিন দিন ধরেই ক্রমশ অবনতি হতে থাকে তাঁর শারীরিক অবস্থা। শনিবার চিকিৎসকরা জানিয়ে দেয়, পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। অবশেষে দীপাবলীর পরের দিন রোববার দুপুরেই নিভে গেল বাঙলার ‘আইকন অপুর’ জীবন। তাঁর প্রয়াণে বাংলা, ভারত ও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র জগত এক মহান অভিনেতাকে হারালো।
হাসপাতাল থেকে কেওড়াতলা শ্মশানে শেষকৃত্য পর্যন্ত উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়, বাম দলের বিমান বোস, সূর্যকান্ত মিশ্র, সুজন চক্রবর্তীসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। উপস্থিত ছিলেন সিনেমা, নাট্য জগতের শিল্পী ও অগণিত ভক্তবৃন্দ।
মৃত্যুর দুই মাস আগে ৩০ সেপ্টেম্বর সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় শেষ শুটিং করে গেছেন ভারত লক্ষ্মী স্টুডিওতে ‘আমি সৌমিত্র’ বইয়ের। তাকে নিয়েই তৈরি হচ্ছিলো এক দীর্ঘ ডক্যু-ফিচার, যার নাম ‘আমি সৌমিত্র’। এই তথ্য চিত্রে শুধু অভিনেতা সৌমিত্র নন, কবি, নাট্যকার, নাট্য পরিচালক ও চিত্রকর সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের পরিচয়ই শুধু নয়, তাঁর বহু গুণাবলীর নিদর্শন তুলে ধরার পরিকল্পনা ছিল পরিচালক সায়ন্তন মুখার্জীর। পরিচালক জানিয়েছেন, এই চলচ্চিত্রের শুটিং অসমাপ্ত থাকলেও যে ক’দিন শুটিং হয়েছে সে সবের অংশ নিযে স¤পূর্ণ করা হবে ‘আমি সৌমিত্র’র।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে এদিন রাতেই ‘বাংলার জামাই বাবু’ বলিউডের মেগাস্টার অমিতাভ বচ্চন ট্যুইটারে গভীর শোক জানিয়ে বলেন, ‘সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় কিংবদন্তী অভিনেতা’। তিনি বলেন, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিজের অন্যতম শক্তিশালী স্তম্ভের পতন হলো। সকল পর্যায়ে অত্যন্ত প্রভাবশালী ও ভালো মানুষ ছিলেন তিনি।