Facebook
Twitter
Youtube
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
নানা কৌশলে মানুষকে ফাঁদে ফেলতেন তারা। স্বামী অন্য নারীকে ফাঁদে ফেলতেন, স্ত্রীর শিকার হতেন পুরুষরা। প্রেমের অভিনয় করে তারা বাড়িতে ডাকতেন। এরপর অন্তরঙ্গ হওয়ার মুহূর্তেই শিকারকে হত্যা করতেন। তারা এতটাই বিকারগ্রস্ত যে, দিনের পর দিন এসব মৃত মানুষের মাংস সংরক্ষণ করে সেগুলো রান্না করে খেয়েছেন। এমনকি নরমাংস রান্নার বইও লিখে ফেলেন দু’জনে।
২০১৭ সালে রাশিয়ান এ সিরিয়াল কিলার দম্পতি পুলিশের কাছে গ্রেফতার হন। দুই দশক ধরে তারা সাধারণ মানুষের ভিড়েই লুকিয়ে ছিলেন। অবশেষে কয়েকটি ছবির কারণে ভয়ঙ্কর এ দম্পতি ধরা পড়ে। পুলিশের তথ্যমতে, নাটালিয়া বাকশিভা এবং তার স্বামী দিমিত্রি বাকশিভ ১৯৯৯-২০১৭ সাল পর্যন্ত ৩০ জনকে খুন করেছেন এবং তাদের মাংস খেয়েছেন।
২০১৭ সালের ১১ সেপ্টেম্বর দিমিত্রি তার ফোনটি হারিয়ে ফেলেন। দুর্ভাগ্যবশত তার ফোনটি বাড়ির পাশেই পড়েছিল। অথচ নেশার ঘোরে দিমিত্রি টেরও পাননি। তার ফোনটি পরের দিন সকালে এক ব্যক্তি খুঁজে পান। তারপর তিনি ওই ফোনের ফটো গ্যালারিতে প্রবেশ করেই দেখতে পান লোমহর্ষক কিছু ছবি।
মৃত এক ব্যক্তির কাটা হাত কামড়ে খাচ্ছেন দিমিত্রি। আরেকটি ছবিতে দেখা যায়, দিমিত্রির স্ত্রী নাটালিয়া একটি কাটা মাথার সঙ্গে ছবি তুলেছেন। এসব ছবি দেখে ফোন উদ্ধার করা ব্যক্তি বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন। তিনি দ্রুত পুলিশের কাছে গিয়ে এসব ছবি দেখান। এরপরই পুলিশ দম্পতিকে খুঁজতে শুরু করে। তাদের খুঁজতে পুলিশকে বেগ পেতে হয়নি। কারণ তারা আশেপাশের এলাকায়ই ছিলেন।
পুলিশ তাদের বাড়িতে গিয়ে অবাক হয়ে যায়। ডাস্টবিনের চেয়েও নোংরা এবং দুর্গন্ধযুক্ত এক বাড়িতে তারা বসবাস করতেন। ঘরের জানালাগুলোও হয়তো কোনোদিন খুলতেন না। চারপাশে আবর্জনা, ইঁদুর-তেলাপোকা ঘোরাঘুরি করছে। এ ঘরের মধ্যেই মানুষকে খুন করে তাদের মাংস কাটাকাটি করতেন স্বামী-স্ত্রী।
পুলিশ তাদের ঘরের বিভিন্ন স্থানে রক্তের দাগ খুঁজে পান। ফ্রিজের মধ্যে মৃত কয়েক জনের হাত-পা সংরক্ষণ করা ছিল। এ ছাড়াও মৃতদের মাংসগুলো বিভিন্ন আকারে কেটে রাখা ছিল ডিপ ফ্রিজে। এরপর ফ্রিজের নরমাল অংশটি খুলেই গন্ধে অজ্ঞান হওয়ার উপক্রম হয়েছিল পুলিশের। সেখানে মানুষের মাংস দিয়ে রান্না করা বিভিন্ন পদ ছিল। সেইসঙ্গে বিড়ালের শরীরের অংশ পেয়েছিল পুলিশ। এ দম্পতি বিভিন্ন প্রাণির মাংসও খেতেন।
অপরাধী এ দম্পতি পুলিশের কাছে ৩০ জনের নাম বলতে পেরেছিলেন। খুনের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে ধারণা পুলিশের। পুলিশকে তারা জানান, নাটালিয়া বিভিন্ন পুরুষের সঙ্গে সম্পর্কে জড়াতেন। এরপর তাদের বাড়িতে ডেকে সুযোগ বুঝে হত্যা করতেন দিমিত্রি ও নাটালিয়া। অন্যদিকে দিমিত্রিও বিভিন্ন নারীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক করে ঘরে ডাকতেন। অন্য ঘরে লুকিয়ে থাকতেন নাটালিয়া। এরপর সুযোগ বুঝে শিকারকে হত্যা করতেন। তাদের ভাষ্যমতে, সবাইকে তারা খুন করতেন না। যাদের উপর কোনো কারণে রেগে যেতেন বা বিরক্ত হতেন; তাদেরই খুন করতেন।
দক্ষিণ রাশিয়ার উত্তর ককশাস রাজ্যের ক্রাসনোডার ক্রাই অঞ্চলে নাটালিয়ার জন্ম হয় ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি। দিমিত্রির জন্ম হয় ১৯৮২ সালের ২৮ জানুয়ারি। নাটালিয়া পেশায় একজন নার্স ছিলেন। তার আগেও বিয়ে হয়েছিল এবং একটি সন্তান ছিল। আগের সম্পর্কটি দীর্ঘস্থায়ী না হওয়ায় মানসিকভাবে আঘাত পান। সব ভুলতে নেশা করা শুরু করেন। নেশাগ্রস্ত হওয়ায় একসময় চাকরিও হারিয়ে ফেলেন। জানা যায়, তার মায়ের কাছেই সন্তানটি বড় হয়েছে।
অন্যদিকে দিমিত্রি একা ছিলেন। তিনি এতিমখানায় বড় হয়েছেন। খুবই চুপচাপ স্বভাবের দিমিত্রিও যেকোনো কাজ করে খেয়ে বাঁচতেন। নাটালিয়া যে বারে মদ খেতেন; সেখানেই পরিচয় হয় দিমিত্রির সঙ্গে। যদিও দিমিত্রি ছিলেন নাটালিয়ার ৭ বছরের ছোট। তারপরও নাটালিয়া ও দিমিত্রির মধ্যে ভাব আদান-প্রদান হয়। তারা একে অন্যের বন্ধু হয়ে যায় অল্প সময়ের মধ্যেই। এরপর এক বাড়িতে ওঠেন। লিভিং সম্পর্কে ছিলেন দিমিত্রি ও নাটালিয়া। আদৌ তারা বিবাহিত কি-না তা কারো জানা নেই। তবে তারা নিজেদের দম্পতি হিসেবেই পরিচয় দেন।
সব অপরাধ বিবেচনা করে আদালত তাদের দণ্ড দেয়। নাটালিয়াকে ১১ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। যদিও তিনি এ রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করেছিলেন; তবে তার সাজাটি অপরিবর্তিত রাখেন বিচারক। অন্যদিকে দিমিত্রিকে ১২ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। তারা দু’জনই মানসিক রোগী বলে বিবেচিত হন। এজন্য তাদের বাধ্যতামূলক সাইক্রেটিক কাউন্সিলিংয়ে রাখা হয়। ২০২০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি দিমিত্রি পুলিশি হেফাজতে থাকাকালীন টাইপ-১ ডায়াবেটিসে মারা যান। নাটালিয়া এখনো কারাগারে দিন পার করছেন।
ওয়াশিংটন পোস্ট/টাইম/নিউইয়র্ক পোস্ট/জেএমএস/এসইউ/জেআইএম
সর্বশেষ
সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
সর্বাধিক পঠিত
আরও খবর
- আল-রাজী কমপ্লেক্স (জি-৪০১-৩ ), ১৬৬-১৬৭, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্মরণি, বিজয়নগর, ঢাকা-১০০০, বাংলাদেশ
- ফোন : +৮৮ ০২ ৫৫১১১৫০১-২
- ফ্যাক্স : +৮৮ ০২ ৫৫১১১৫০৩
- ই-মেল : info.universetribune@gmail.com
- প্রকাশকঃ মোহাম্মদ আনারুল ইসলাম
- কপিরাইট
- ২০১৯-২০২০ ইউনিভার্স মিডিয়া লিমিটেড
- সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত কপিরাইট