অনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য লে. জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীকে সেনানিবাস এলাকায় অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয়েছে। আজ আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়। (বাসস)
এতে বলা হয়, সম্প্রতি বিএ-২০০৪ লে. জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী, বীর বিক্রম, এনডিসি, পিএসসি, পিএনজি (অব.) বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে সেনানিবাসে প্রবেশ এবং সেনাবাহিনী সম্পর্কে মিথ্যাচার করেন যা কর্তৃপক্ষের নজরে আসে।
উল্লেখ্য, তিনি লে. জেনারেল পদে পদোন্নতি পাওয়ার পর এনডিসির কমান্ড্যান্ট থাকাবস্থায় একাধিক নারীর সাথে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। তিনি এনডিসিতে পরিচালিত বিভিন্ন কোর্সের সাথে বিদেশে ভ্রমণকালেও অনেক মেয়েকে নিয়ে চলাফেরা করেন এবং বিভিন্ন মাধ্যমে তার এই অশোভনীয় আচরণ এবং মেলামেশার ছবি কর্তৃপক্ষের গোচরীভূত হলে কর্তৃপক্ষ বিব্রত হয় এবং তাকে বিভিন্নভাবে উপদেশ দেয়া হয়।
তিনি এলপিআর-এ থাকাকালীন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া ১৬ আগস্ট ২০১৮ তারিখে প্রথম স্ত্রীকে তালাক প্রদান করেন এবং সেনা আইন বর্হিভূতভাবে মেসকিট (সামরিক পোশাক) পরে ২১ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিত দ্বিতীয় স্ত্রীকে বিবাহ করেন। কিন্তু তিনি বিবাহের পূর্বে একজন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বকে নিয়ে ৩ নভেম্বর ২০১৮ থেকে একই বাসায় অনৈতিকভাবে অবস্থান করেন।
এমনকি তিনি বিবাহের পূর্বে তাকে নিয়ে পহেলা বৈশাখ উদযাপন, সাজেক রিসোর্ট, খাগড়াছড়িতে অবকাশ যাপন, বিভিন্ন সময় ভারত, থাইল্যান্ড, আইসল্যান্ড, নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ডে ভ্রমণ ও অবস্থান করেন, যার সচিত্র আলামত সামরিক ও অসামরিক পরিমন্ডলে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়। এছাড়াও তিনি যাকে বিয়ে করেন সে একজন বিতর্কিত নারী হিসেবে পরিচিত।
লে. জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীর (অব.) এ ধরনের আচরণ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের জন্য অস্বস্তিকর ও বিব্রতকর। এ ধরনের ঘটনা সেনাবাহিনীতে কর্মরত অফিসার এবং অন্যান্য পদবীর মধ্যে নেতিবাচক উদাহরণ হিসেবে কাজ করে ও বিরুপ প্রভাব ফেলে। সামগ্রিক বিবেচনায়, গত ১০ এপ্রিল ২০১৯ তারিখ উক্ত অফিসারকে সেনানিবাস ও সেনানিবাস আওতাভুক্ত এলাকায় অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয়।
উল্লেখ্য, সেনা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ‘অবাঞ্চিত ব্যক্তি’র জন্য সেনানিবাস ও সেনানিবাসের আওতাভুক্ত সকল স্থাপনা এবং সেনানিবাসের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা যেমন- সিএমএইচ-এ চিকিৎসা সেবা, অফিসার্স ক্লাব, সিএসডি শপ ইত্যাদিতে প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ।
বিয়ের আগেই ব্রাউনিয়ার সঙ্গে বেডরুম ভাগাভাগি করতেন সারওয়ার্দী!
বিয়ের আগে থেকেই উপস্থাপিকা ও সংগঠক ফারজানা ব্রাউনিয়ার সঙ্গে একই বাসায় থাকতেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী। ২০১৮ সালের ১৬ আগস্ট তিনি প্রথম স্ত্রীকে তালাক দেন। প্রথম সংসারে তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তারা তাদের মায়ের সঙ্গেই থাকে।
ব্রাউনিয়ার সঙ্গে সারওয়ার্দীর পরিচয়টা হয়েছিল ২০১৫ সালে মিরপুরে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজে (এনডিসি) দুই সপ্তাহব্যাপী ক্যাপস্টোন কোর্স করার সময়। এরপর নানা সূত্রে তাদের ঘনিষ্টতা বাড়ে। পরস্পর আরও কাছাকাছি আসে।
দুই পরিবারের সম্মতিতেই সারওয়ার্দী-ব্রাউনিয়ার সম্পর্কটা পরিণয়ের দিয়ে এগোয়। ২০১৮ সালের ৬ নভেম্বর তাদের আক্দ হয়। ১৬ নভেম্বর বিয়ে নিবন্ধন হয়। ২০ নভেম্বর তারা সাভার গলফ ক্লাবে যান এবং পাশ্চাত্য শৈলীতে বিয়ের ফটোসেশনে অংশ নেন।
স্বর্ণ কিশোরী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ফারজানা ব্রাউনিয়ারও সেটি ছিল দ্বিতীয় বিয়ে। এর আগেও তিনি বিয়ে করেছিলেন। ২০০০ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে সংবাদ পাঠিকা হিসেবে ব্রাউনিয়ার ক্যারিয়ার শুরু হয়। তখন তিনি ইংরেজি সংবাদ পাঠিকা হিসেবে পরিচিতি পান। গ্ল্যামার গার্ল হিসেবে পরিচিত ব্রাউনিয়ার প্রথম বিয়ে হয়েছিল লন্ডন প্রবাসী এডফিল্ম মেকার মিনহাজ কিবরিয়ার সঙ্গে।
এদিকে ফারজানার সঙ্গে সম্পর্ক গাঢ়তর হওয়ার এক পর্যায়ে ২০১৮ সালের ১৬ আগস্ট প্রথম স্ত্রীকে তালাক দেন চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী।
ব্রাউনিয়াকে বিয়ে করার আগে থেকেই সারওয়ার্দী তাকে নিয়ে পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন, সাজেক রিসোর্ট, খাগড়াছড়িতে অবকাশ যাপন, বিভিন্ন সময় ভারত, থাইল্যান্ড, আইসল্যান্ড, নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ডে ভ্রমণ ও অবস্থান করেন। ২০১৮ সালের ২১ নভেম্বর সারওয়ার্দীর সঙ্গে ব্রাউনিয়ার বিয়ে হয়। অথচ ব্রাউনিয়াকে নিয়ে বিয়ের ১৭-১৮ দিন আগে (৩ নভেম্বর) থেকেই এক বাসায় থাকতেন সারওয়ার্দী। বিয়ের আগে থেকেই ব্রাউনিয়ার সঙ্গে বেডরুম ভাগাভাগি করতেন সদ্য সেনানিবাস এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষিত হওয়া সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা।