এ অবস্থায় দোকান মালিক ও শ্রমিকরা সড়কে নেমে আসেন। সংঘবদ্ধভাবে তারা ডিএসসিসি মেয়রের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। তাদের প্রতিবাদ উপেক্ষা করে বেলা পৌনে ১টার দিকে এক্সকেভেটর দিয়ে নগর প্লাজার সামনের ফুটপাতে থাকা দোকান ভাঙা শুরু করেন।
এতে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে দোকান মালিক, ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের মাঝে। চারপাশ থেকে তারা উচ্ছেদকারী দলের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।
শুরুতে পুলিশ পিছু হটলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই কাঁদুনে গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। এরপর মার্কেটের সামনের সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
মার্কেটের ব্যবসায়ী, দোকান মালিক ও শ্রমিকরা জানান, এখন করোনা পরিস্থিতি। ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা খুবই খারাপ। এর মধ্যে আমাদের ব্যবসা শেষ করে দিচ্ছে ডিএসসিসি।
এখন আমরা কীভাবে চলব। আমরা মেয়রের কাছে কিছুদিন সময় চেয়েছি। কিন্তু কোনো সময় দেয়া হয়নি। এছাড়া উচ্ছেদ অভিযানের ব্যাপারে আমাদের কিছু বলাও হয়নি।
তারা আরও জানান, মার্কেটের দোকান মালিক সমিতির নেতারা একেকটি দোকানের বিনিময়ে ৫ লাখ, ৭ লাখ, ১০ লাখ ও ১৫ লাখ টাকা করে নিয়েছেন। টাকা নেয়ার রসিদও দিয়েছেন তারা।
বারবার বলা হয়েছে, আমাদের বৈধ কাগজপত্র করে দেয়া হবে। কিন্তু সেসব কিছুই দেয়া হয়নি। দুপুরে নগরভবনে ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ডিএসসিসি বিভিন্ন মার্কেটের নকশাবহির্ভূতভাবে অনেক অবৈধ দোকান তৈরি করা হয়েছে।
এতে মার্কেটের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। অবৈধ সব দোকানপাট উচ্ছেদ করে মার্কেটগুলোর ব্যবসার উপযোগী পরিবেশ ফিরিয়ে দেয়া হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কাদের সহযোগিতায় কোন সময় মার্কেটগুলোয় এসব অবৈধ দোকান গড়ে উঠেছে, সেটা আমি জানি না।
তবে এ কথা বলতে পারি, এখন এসব কাজের সঙ্গে ডিএসসিসির কেউ জড়িত নেই এবং থাকবেও না। কারও কাছে প্রমাণ থাকলে জানাবেন ব্যবস্থা নেব। আর সব অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ করব।
ডিএসসিসির রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, প্রায় দুই দশক ধরে সিটি কর্পোরেশনের সম্পত্তি এবং রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তাদের সহায়তায় ফুলবাড়িয়া মার্কেটের নকশা উপেক্ষা করে অবৈধ দোকান তৈরি করে বিক্রি করেছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র।
বিভিন্ন সময় বিষয়গুলো আলোচনায় এলেও এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। বরং সময়ের ব্যবধানে দোকানের সংখ্যা বেড়েছে।
বর্তমানে ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২-এর এ, বি এবং সি ব্লকে ৮১০টি অবৈধ দোকান রয়েছে। যেখান থেকে মঙ্গলবার ২৫০টি উচ্ছেদ করা হয়েছে।
ডিএসসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মনিরুজ্জামান বলেন, ফুলবাড়িয়া মার্কেটের অবৈধ দোকানগুলো উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। ২৫০টি উচ্ছেদ করা হয়েছে। বাকিগুলো উচ্ছেদে আগামীকালও (আজ) অভিযান পরিচালনা করা হবে।
পুলিশ কর্মকর্তা এসি দেলোয়ার হোসেন বলেন, উচ্ছেদ অভিযানে ডিএসসিসির দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্দেশে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ করেছে।
উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করার স্বার্থেই টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে পরবর্তী সময়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিক, ব্যবসায়ী এবং শ্রমিকরা জানান, যাদের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে মার্কেটগুলোয় অবৈধ দোকানপাট গড়ে উঠেছে, সেসব ব্যক্তিকে খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণেরও ব্যবস্থা করতে হবে।