অযোধ্যায় নতুন মসজিদের প্রস্তাবিত নকশা। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের ৭২তম প্রজাতন্ত্র দিবসে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে শুরু হলো নতুন মসজিদ তৈরির কাজ।


মঙ্গলবার অযোধ্যার ধান্নিপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে মসজিদের কাজ শুরু করেন অল ইন্ডিয়া সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের নেতারা। খবর এনডিটিভির।  

মসজিদ নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংগঠনটির চেয়ারম্যান জাফর ফারুকি এবং ইন্দো-ইসলামিক কালচারাল ফাউন্ডেশনের (আইআইসিএফ) সম্পাদক আতাহার হুসেন জানান, দুটি কারণে ২৬ জানুয়ারিকে বাছা হয়েছে। 
প্রথমত, ইসলামে প্রতিটি দিনই পবিত্র। দ্বিতীয়ত, ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবস, যেদিন সংবিধান উপহার দিয়েছিল জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবার অধিকারের নিশ্চয়তা। দেশবাসীর জন্য দিনটির গুরুত্বই আলাদা। 
ধান্নিপুরের মসজিদকে গড়ে তোলা হবে সমান অধিকারের প্রতীক হিসাবে। 

আতাহার জানান, ধান্নিপুরে বরাদ্দ জমিতে মসজিদ ছাড়াও থাকবে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল, অত্যাধুনিক লাইব্রেরি, গবেষণাকেন্দ এবং কমিউনিটি কিচেন। 

ওয়াকফ বোর্ড এবং আইআইসিএফ জানিয়েছে, ভারবহন-সক্ষমতা পরীক্ষার জন্য রোববার বরাদ্দ জমির মাটির নমুনা সংগ্রহ করা হয়। 

আতাহার জানান, পরিবেশ রক্ষার লক্ষ্যে নতুন মসজিদের যাবতীয় কাজকর্ম হবে সৌরশক্তিতে। 

জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে অর্ধেক জমিতে হবে সবুজায়ন। তাতে থাকবে পৃথিবীর নানা প্রান্তের বিপন্ন বনাঞ্চলের গাছ।

এই প্রকল্পের প্রথম ধাপে মসজিদের পাশাপাশি হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা রাখা হয়েছে বলে আইআইসিএফ নেতারা জানিয়েছেন। 

ট্রাস্টের সম্পাদক আতাহার হুসেন বলেন, হাসপাতাল চত্বরে সবার খাবার ব্যবস্থার জন্য একটি রান্নাঘরও নির্মিত হবে। প্রতি দিন এক হাজার মানুষের পুষ্টিকর খাবার পরিবেশন করা হবে। 

রামমন্দির নির্মাণ করতে প্রাকৃতিক সমস্যা, নানা আশংকায় স্থাপত্যবিদরা


 
রাম মন্দির। ফাইল ছবি
রাম মন্দির। ফাইল ছবি

এদিকে ভারতের অযোধ্যায় বহুল আলোচিত বাবরি মসজিদের জায়গায় রাম মন্দির নির্মাণ করতে গিয়ে এবার প্রাকৃতিক বাধায় পড়েছে মন্দির কর্তৃপক্ষ। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ওখানে রামমন্দির করতে গেলে ধসের আশংকা রয়েছে। 

 

শ্রী রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্টের সচিবের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

খবরে বলা হয়, এতদিন আইনি জটিলতায় রামমন্দির নির্মাণ বাধা পেয়েছে।  কিন্তু গত বছর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের রামমন্দির নির্মাণের আর বাধা ছিল না। গত ৫ আগস্ট ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করেছেন। কিন্তু এবার নির্মাণগত বাধার সম্মুখীন রামমন্দির।

মাটি পরীক্ষার পর দেখা গিয়েছে, মন্দিরের ভর ধরে রাখার মতো ক্ষমতা নেই নির্মীয়মাণ কাঠামোর। যার জেরে সমস্যায় মন্দির নির্মাণের কাজ। ফলে বিকল্প উপায় খুঁজছে ট্রাস্ট। আইআইটি, এনআইটি, সেন্ট্রাল বিল্ডিং রিসার্চ ইন্সস্টিটিউট (রুরকি), এবং লারসেন অ্যান্ড টিউব্রোর মতো সংস্থার প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা মন্দিরের প্রস্তাবিত গর্ভগৃহের পশ্চিম দিকে পানির তোড়ে বেলেমাটি ধসে যাওয়ার দরুন সমস্যার সম্মুখীন।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, স্থাপত্যের নকশাকারী প্রতিষ্ঠান লারসেন অ্যান্ড টিউব্রো জমা দিয়েছে, তাতে দেখা গিয়েছে, ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ২০-৪০ মিটার গভীরে ১২০০ কংক্রিট পিলার বসানো হবে। 

ট্রাস্টের সচিব  চম্পত রাই বলেন, বেশ কয়েকটি পিলার ভূপৃষ্ঠ থেকে ১২৫ ফুট নিচে বসিয়ে তার ২৮ দিন পর পরীক্ষা করা হয়েছিল। সেই স্তম্ভগুলির উপর ৭০০ টন ভর চাপিয়ে পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু আশাতীত ফল পাওয়া যায়নি। মেশিনে যে রিডিং পাওয়া যায় সেটা আশা করা হয়নি।

তিনি বলেন,  গর্ভগৃহের পশ্চিম দিকে সরযু নদী বয়ে চলেছে। যেখানে পিলারগুলি বসানো হয়েছে তার পাশেই নদীর পানি ও বেলেমাটি রয়েছে। ইঞ্জিনিয়ারদের মতে, নরম বালি স্থাপত্যের ভর ধরে রাখতে পারবে না। তাই বিশেষজ্ঞরা চিন্তাভাবনা করছেন কীভাবে মন্দিরের গর্ভগৃহের কাছে নদীর পানিকে আটকে রাখা যায়। কীভাবে বালির উপর স্থাপত্য তৈরি করা যায় এবং কংক্রিট পিলারের স্থায়িত্ব বাড়ানো যায়।

 

ভারতের উগ্রপন্থী হিন্দুরা ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে। ফাইল ছবি
ভারতের উগ্রপন্থী হিন্দুরা ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে। ফাইল ছবি

 

প্রসঙ্গত, ১৯৯২ সালের ডিসেম্বর মাসে সাম্প্রদায়িক ও ফ্যাসিবাদী শক্তি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থকরা বাবরি মসজিদে হামলা চালাতে উস্কানিমূলক ভূমিকা রেখেছিল এবং মুসলমানদের ৫০০ বছরের পুরনো মসজিদটিতে অত্যন্ত নৃশংসভাবে হামলা চালিয়েছিল। 

 ২০১৯ সালের নভেম্বরে সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চ রায়ে জানায়, বিতর্কিত জমির ওপর মন্দির নির্মাণ হবে।

বাবরি মসজিদের জায়গায় যেভাবে রাম মন্দিরের সিদ্ধান্ত

ভারতের উত্তর প্রদেশের শহর অযোধ্যায় ১৯৯২ সালে ধ্বংস করা হয়েছিল বাবরি মসজিদ। এ নিয়ে এই অঞ্চলে বহু বছর ধরেই হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে বিবাদ চলছিল।

বিতর্কিত এই স্থান নিয়ে রাম জন্মভূমি ট্রাস্ট ও সুন্নি ওয়াকিফ বোর্ড সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। অবশেষে ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে এ বিতর্কিত জায়গায় রাম মন্দির তৈরির পক্ষেই চূড়ান্ত রায় দেয় ভারতের সুপ্রিমকোর্ট।

বদলে মুসলিম পক্ষকে মসজিদ তৈরির জন্য অযোধ্যার মধ্যেই ৫ একর জমি দেয়ার নির্দেশ দেয় সুপ্রিমকোর্ট। রায় নিয়ে মুসলিমদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে।

সরকারের পক্ষ থেকে এপ্রিলেই রাম মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু লকডাউনের জেরে পুরো প্রক্রিয়ায় পেছাতে হয়। দিল্লি নির্বাচনের তিন দিন আগে লোকসভায় সেই ট্রাস্ট গঠনের কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

বিজেপির এমপিরা সেদিন ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি তুলেছিলেন। গত ২৬ মে মন্দিরের নির্মাণস্থলে যান রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্টের চেয়ারম্যান মোহন্ত নৃত্যগোপাল দাস। সেখানে পূজার পর রাম মন্দিরের কাজ শুরুর ঘোষণা দেন তিনি।

বিতর্ক চলাকালীন এতদিন অস্থায়ী একটি টিনের কাঠামোর উপরেই পূজা হতো রামলালার। গত মার্চ মাসে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ রামলালার মূর্তি মানস ভবনে স্থানান্তরিত করেন।

কেমন হবে রাম মন্দির?

ফাইবারের তৈরি এই নতুন অস্থায়ী এ মন্দিরের কাঠামো পুরোপুরি বুলেটপ্রুফ। লকডাউন শিথিল হতেই পুনরায় এই অস্থায়ী মন্দির খুলতে চলেছে বলে খবর। এখন থেকে সামাজিক দূরত্ব ও অন্যান্য বিধিনিষেধ মেনেই শুরু হবে রামলালার নিত্য পুজো।

 

 

রাম মন্দির নির্মাণের জন্য রাম লালার মূর্তি বিকল্প জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সেখানে খোলা থাকবে মন্দির। তার দর্শন এবং পুজো করতে পারবেন ভক্তরা। আট ঘণ্টা খোলা থাকবে মন্দির।

সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা এবং বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা। মাত্র ৫ জন করে মন্দিরে প্রবেশ করতে পারবেন। মন্দিরটি হবে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী। মোট ১২৫ ফুট উচ্চতার। যদিও তা বাড়িয়ে ১৬০ ফুট করার প্রস্তাব এসেছে নানা জায়গা থেকে। মন্দিরের প্রথম তলা ১৮ ফুটের। সেখানে থাকবে রাম লালার মূর্তি। দ্বিতীয় তলা হবে ১৫ ফুট ৯ ইঞ্চি। এই দ্বিতীয় তলা ‘রামের দরবার’ হিসেবে গড়ে তোলা হবে।

 
আরও খবর